বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম আর নেই। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোববার বিকালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
সদ্য প্রয়াত এ বর্ষীয়ান নেতা বিএনপি গঠনের সময় থেকেই দলে ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাম রাজনৈতিক দলে থাকাবস্থায় জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। তরিকুল ইসলাম ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য।
তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। বাবা আবদুল আজিজ ব্যবসায়ী ছিলেন। যশোর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে তিনি প্রবেশিকা (ম্যাট্রিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে আইএ এবং ১৯৬৮-তে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
কলেজের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের নিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন তিনি। কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয়। সেই সূত্রে তিনি বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে ৯ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রেফতার হন।
১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম।
সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পরে পর্যায়ক্রমে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পান। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম দলের বিভিন্ন সময়ের দুর্দিনে নেতৃত্বে ও পাশে ছিলেন বলে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়।
তরিকুল ইসলাম ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে প্রথমে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। চার দলীয় জোট সরকারের সময় তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
সর্বশেষ গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। সাবেক এই মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। গত একমাস ধরে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
যশোরের উন্নয়নে তরিকুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। যশোর মেডিকেল কলেজ, যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভাগীয় কাস্টমস অফিস, বেনাপোল স্থল বন্দর, যশোর মডেল পৌরসভার উন্নয়নে তিনি অবদান রেখেছেন।